পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলাম সমর্থন করে কিনা ?




পহেলা বৈশাখ পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা পালন মুসলমানদের কাজ নয়। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালনের সংস্কৃতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। তবে বাংলা সন বা পহেলা বৈশাখ বাঙালি দ্বারা প্রবর্তিত নয়। বাদশাহ আকবর ফসলী সন হিসেবে এর প্রবর্তন করে। আর বাদশাহ আকবর ছিল মঙ্গলীয় এবং ফারসী ভাষী। তাহলে এটা কি করে বাঙালি সংস্কৃতি হতে পারে?

যুক্তিবাদীর কমেন্টঃ বাঙলা নববর্ষ একটি সার্বজনীন উৎসব। এটি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সবাই পালন করে আসছে বিগত চারশ বছর ধরে। এই উৎসবকে কেউ নিজেদের ধর্মীয় উৎসব বলে এখনো দাবী করে নাই।  তাই বাঙলা নববর্ষ কোনো ভাবেই বিজাতীয় বা বিধর্মীয় সংস্কৃতি হচ্ছে না।

যুক্তির দিক দিয়ে মেনে নিলাম এটি কোন ধর্মীয় সংস্কৃতি না শুধু মাত্র বাঙালি জাতির সংস্কৃতি এবং এটি একটি সার্বজনীন উত্‍সব। (আমি পহেলা বৈশাখের উত্‍পত্তি নিয়ে ১০ টার ও বেশি মতামত পেয়েছি যার কারনে কোনটাই বিশ্বাস করতে পারছিনা)

উদ্দাম নৃত্য, যাত্রাপালা, শাঁখা-সিঁদুরের রংয়ে (সাদা ও লাল) পোশাক, বিয়ের মিথ্যা সাজে দম্পতি সাজিয়ে বর-কনের শোভাযাত্রা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা, দৃষ্টিকটূ আচরণ, মূর্তির (কুমির, পেঁচা, বাঘ ইত্যাদির মুখোশ) প্রদর্শনী, উল্কি আঁকাঁ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদি কি বাংলার আপামর জনতার সংস্কৃতি? এই ধার করা সংস্কৃতিচর্চা করতে গিয়ে শুধু ঢাবি ক্যাম্পাসে গত বছর সাংবাদিকসহ ১৬ জন তরুণী লাঞ্ছিত হয়েছে, যা পত্রিকায় (নয়া দিগন্ত, ১৬.৪.১১) প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ সব ঘটনা সংকলন সম্ভব নয় ।এদিনে তারা(ছেলে মেয়ের বিবেধ ভুলে) নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার।পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নামে নারী পুরুষের সম্মিলিত নাচ-গান, রং ছিটানোগান-বাজনা করে, রেলী করে, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরে, মিছিল করে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গে উল্কি আঁকে, ডুগডুগি বাজিয়ে নেচে নেচে হৈহুল্লোড় করে,পুরুষরা ধুতি ও কোণাকাটা পাঞ্জাবী যা হিন্দুদের জাতীয় পোশাক তা পরে, মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়িসহ হাতে রাখি বাঁধে, শাঁখা পরে, কপালে লাল টিপ ও চন্দন এবং সিথিতে সিঁদুর দেয়, বেপর্দা, বেহায়া হয়- যা সম্মমানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।যে সংস্কৃতির মধ্যে এতগুলো ইসলাম বিরুধী কর্মসেই সংস্কৃতি পালন করা কখনো একজন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব না।

আল্লাহ বলেন:
প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়। [আল-হাজ্জ্ব:৬৭]

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা (ঈদ উল আযহা, ঈদ উল ফিতর)আমাদের ঈদ।” [বুখারী, মুসলিম]


আমাদের করণীয়:-
সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে:
১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত
২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান
৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান
৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং কাজ
এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং বাঙালি মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া যেতে পারে:
- এ বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে আইন প্রয়োগের দ্বারা নববর্ষের যাবতীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
- যেসব ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই নির্দেশ জারি করতে পারেন যে, তার প্রতিষ্ঠানে নববর্ষকে উপলক্ষ করে কোন ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হবে না, নববর্ষ উপলক্ষে কেউ বিশেষ পোশাক পরিধান করতে পারবে না কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবে না।
- মসজিদের ইমামগণ এ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে সচেতন করবেন ও বিরত থাকার উপদেশ দেবেন।
- পরিবারের প্রধান এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়।
- এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী ও পরিবারের মানুষকে উপদেশ দেবেন এবং নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন, এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।


“আর তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান ও যমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।” (সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৩৩) 

 হে আল্লাহ আপনি আমাদের এই রকম একটা গুনাহ ( পাপ) থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।  আমিন ।